উনিশ শতকের গুরুত্বপূর্ণ সমাজ সংস্কারক

রাজা রামমােহন রায় (১৭৭২-১৮৩৩) :

  • ১৭৭২ সালে ২২ মে (মতান্তরে ১৭৭৪) হুগলি জেলার রাধানগরের এক ধনী ব্রাহ্মণ পরিবারে তাঁর জন্ম হয়।
  • পিতা রাধাকান্ত রাও, মা তারিণী/উমাদেবি
  • ‘ ভারতপথিক ’রাজা রামমোহন রায় (১৭৭২ – ১৮৩৩, ২৭ সেপ্টেম্বর) ছিলেন “ভারতীয় নবজাগরণের অগ্রদূত”।
  • তাঁকে “ভারতের প্রথম আধুনিক মানুষ” (the first modern man of India) “আধুনিক ভারতের জনক” (Father of modern India) প্রভৃতি নানা অভিধায় ভূষিত করা হয়েছে।
  • নেতাজী সুভাষচন্দ্র বস তাঁকে যুগ দূত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁকে “ভারত পথিক” বলে সন্মান জানিয়েছেন।
  • পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর মতে, তিনি ছিলেন “ভারতীয় জাতীয়তাবাদের জনক”। অনেকে তাঁকে “ভারতের ইরাসমাস” বলে অভিহিত করেছেন।
  • ১৮০৩ – ১৮১৪ তিনি ইংরেজদের (জন ডিগবি) দেওয়ান(রাজস্ব আধিকারিক) পদে বহাল ছিলেন
  • ১৮০৯ সালে "A Gift to Monotheist"-এর ফার্সী সংস্করণ তহফাত উল মুহাহিদিন (একেশ্বরবাদের উপহার) রচনা করেন।
  • রামমােহন তার একেশ্বর মতবাদ হিন্দুশাস্ত্রের সাহায্যে প্রচারের জন্যে ১৮১৫ খ্রীঃ আত্মীয় সভা প্রতিষ্ঠা করেন। রামমােহন ব্রাহ্মসভা গঠন ( ১৮২৮ খ্রি. ) করেন, পরবর্তীকালে এর নাম হয় ব্রাহ্মসমাজ । ১৮২৮খ্রিস্টাব্দের ২০ আগষ্ট ব্রাহ্মসমাজের প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তারাচাদ চক্রবর্তী ছিলেন ব্রাহ্মসমাজের প্রথম সেক্রেটারী।
  • ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে তিনি লেখেন দ্য প্রিসেন্ট অফ জেসাস, দ্য গাইড টু পিস অ্যান্ড হ্যাপিনেস। রামমােহন রায় ‘রামদাস’ ছদ্মনামে লিখতেন।
  • বাংলা ভাষায় সম্বাদ কৌমুদী ( ১৮২১ খ্রি. ) এবং ফারসিতে প্রকাশিত মিরাৎ – উল – আখবর ( ১৮২২ খ্রি. ) ইত্যাদি ছিল তাঁর প্রকাশিত সংবাদপত্রের উল্লেখযােগ্য নিদর্শন ।
  • উগ্র খ্রীষ্টয় মিশনারীরা হিন্দুধর্মকে আক্রমণ করে কুৎসা রচনা করায় তিনি ব্রাহ্মণিক্যাল ম্যাগাজিন (Brahmanical Magazine) নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন।
  • ১৮২৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইউনিটারিয়ান মিশন ও বেদান্ত কলেজ স্থাপন করেন।
  • হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যপারে তিনি কতটা যুক্ত ছিলেন সে ব্যপারে বিতর্ক থাকলেও তিনি নিজ ব্যয়ে কলকাতায় একটি ইংরেজি বিদ্যালয় পরিচালনা করতেন।
  • আলেকজান্ডার ডাফ – এর সহযােগিতায় জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ ইন্সটিটিউশন(এখন পরিচিত স্কটিশ চার্চ কলেজ হিসেবে) প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ নেন । তিনি নিজের প্রচেষ্টায় অ্যাংলাে হিন্দু স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন ।
  • রাজা রামমোহন রায়ের আন্দোলনের প্রভাবে তৎকালীন ভারতের গভর্নর জেনারেল উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক ১৮২৯ সালে XVII নং রেগুলেশন জারি করে সতীদাহ প্রথা নিবারন করেন।
  • তাঁকে ‘রাজা’ উপাধি দেন মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় আকবর।
  • মেনেনজাইটিসে আক্রান্ত হয়ে ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইংল্যান্ডের ব্রিস্টলে মারা যান।
  • মেরী কার্পেন্টার ছিলেন তাঁর জীবনীকার।

দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮১৭-১৯০৫) :

  • ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি তত্ত্ববােধিনী সভা প্রতিষ্ঠা করেন।
  • ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে তিনি তত্ত্ববােধিনী স্কুল স্থাপন করেন।
  • ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে তত্ত্ববােধিনী পত্রিকা প্রকাশ করেন।
  • দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মসমাজে যােগ দেন।
  • ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘ব্রাহ্মধর্ম’ বলে একটি গ্রন্থ রচনা করেন।

কেশবচন্দ্র সেন (১৮৩৮-১৮৮৪) :

  • ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে কেশবচন্দ্র সেন ব্রাহ্মসমাজে যােগ দেন এবং দেবেন্দ্রনাথের কাছের মানুষ হয়ে যান। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর কেশবচন্দ্র সেনকে আচার্য পদে নিয়ােগ করেন।
  • ১৮৬০ খ্রি. তিনি ‘ সংগতসভা ’ ও ‘ ব্রাহ্মবন্ধু সভা ’ প্রতিষ্ঠা করে তরুণ ব্রাহ্মদের সমাজ সেবার আদর্শে উদ্বুদ্ধ করেন ।
  • ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে তার আন্দোলনের ফলে অসবর্ণ বিবাহ (Inter caste Marriage) চালু হয়।
  • ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে কেশবচন্দ্র সেনকে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘ব্রহ্মানন্দ’ উপাধি দেন।
  • ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে কেশবচন্দ্র সেন দক্ষিণ ভারতে যান এবং ‘বেদসমাজ প্রতিষ্ঠা করেন।
  • উভয়ের মধ্যে মতবিরােধ ঘটায় ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর তাকে আচার্য পদ থেকে বিচ্যুত করেন।
  • ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মসমাজ দুটি ভাগে ভাগ হয়ে যায়। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের অধীনে ব্রাহ্মসমাজের নাম হয় আদি ব্রাহ্মসমাজ ও কেশবচন্দ্র সেনের অধীনে ব্রাহ্মসমাজের নাম হয় ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ।
  • ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে কেশবচন্দ্র সেন ইন্ডিয়ান রিফর্ম অ্যাসােসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করেন এবং তিনি ইংল্যান্ডে যান রানি ভিক্টোরিয়ার সাথে দেখা করতে।
  • ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে শ্রীধরালু নাইডু দেবসমাজের নাম পরিবর্তন করে রাখেন দক্ষিণ ভারতের ব্রাহ্মসমাজ।
  • ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে আদি ব্রাহ্মসমাজ ব্রাহ্ম বিবাহ আইনের বিরােধিতা করে। কেশবচন্দ্র সেনের সহযােগিতায় ‘দেশীয় বিবাহ আইন (Native Marriage Act, 1872) পাশ হয়, যেটি সিভিল ম্যারেজ অ্যাক্ট নামে বেশি পরিচিত।
  • ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে তার নিজ কন্যার সঙ্গে কুচবিহারের মহারাজার বিবাহ দেন উক্ত আইন লঙ্খন করে, সেজন্য ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে আনন্দমােহন বসু ও শিবনাথ শাস্ত্রী কেশবচন্দ্র সেনের ব্রাহ্মসমাজ থেকে বেরিয়ে গিয়ে সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজ’ স্থাপন করেন।
  • ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে কেশবচন্দ্র সেন নববিধান প্রতিষ্ঠা করেন।
  • ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে নরসংহিতা নামে একটি নতুন বিধি প্রচলন করেন।
  • ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে নববিধান দাশআশ্রম প্রতিষ্ঠিত হয় অস্পৃশ্যতা দূর করতে।
  • কেশবচন্দ্র সেন ব্রাহ্ম বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন কলকাতায়।
  • কেশবচন্দ্র সেন ভিক্টোরিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।
  • নারীদের কল্যাণ ও সমাজে তাদের সুপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে তিনি বামাবােধিনী সভা ( ১৮৬৩ খ্রি. ) ও ব্রাহ্মিকাসমাজ ( ১৮৬৫ খ্রি. ) প্রতিষ্ঠা করেন ।
  • তাঁর প্রচেষ্টায় ব্রিটিশ সরকার ‘ তিন আইন ’ ( Act III of 1872 ) পাস করিয়ে বাল্য বিবাহ ও বহু বিবাহ প্রথা রদ এবং অসবর্ণ বিবাহকে আইনসিদ্ধ করে ।
  • তিনি ক্যালকাটা কলেজ ( ১৮৬২ খ্রি. ) এবং অ্যালবার্ট কলেজও ( ১৮৭২ খ্রি. ) প্রতিষ্ঠা করেন ।

গােপালহরি দেশমুখ :

  • গােপালহরি দেশমুখ ‘লােকহিতবাদী’ নামে পরিচিত ছিলেন।
  • সনাতন হিন্দু ধর্মের তিনি বিরােধিতা করেন।
  • ‘জ্ঞান প্রকাশ’ নামে পুস্তিকার মাধ্যমে তিনি তার মতাদর্শ প্রচার করতেন।

রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব (১৮৩৬-১৮৮৬) :

  • রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের নাম ছিল গদাধর চট্টোপাধ্যায়। হুগলি জেলার কামারপুকুর গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
  • তিনি দক্ষিণেশ্বরের কালী মন্দিরে একজন পূজারী ছিলেন।
  • তার স্ত্রীর নাম ছিল সারদা দেবী।
  • ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে ‘শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত’ বইটি লেখেন মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত। মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত ‘শ্রীম’ নামে পরিচিত ছিলেন ও এই নামে লিখতেন।

এন.এম যােশী :

  • তিনি প্রথমে ‘সার্ভেন্টস অব ইন্ডিয়া’ সােসাইটির ‘একজন সদস্য ছিলেন।
  • ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে বােম্বাইয়ে তিনি ‘সােসাল সার্ভিস লীগ’ প্রতিষ্ঠা করেন।
  • ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে তিনি বােম্বাইতে অল ইন্ডিয়া ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেন।
  • তিনি ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে AITUC পরিত্যাগ করেন এবং ইন্ডিয়ান ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন চালু করেন।

মহাদেব গােবিন্দ রানাডে :

  • বিচারপতি মহাদেব গােবিন্দ রানাডে ছিলেন মহারাষ্ট্রের সমাজ সংস্কারক এবং প্রার্থনা সমাজের সদস্য।
  • ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভারতীয় জাতীয় সামাজিক সম্মেলন’ (Indian National Social Conference) এর উদ্বোধন করেন।
  • তার প্রচেষ্টায় গােপাল গণেশ আগারকর ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে ডেকান এডুকেশন সােসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন। পুণাতে ডেকান এডুকেশান সােসাইটি প্রতিষ্ঠা করতে গােপাল গণেশ আগারকরকে সাহায্য করেছিলেন তিলক, ভি.কে. চিপলঙ্কার এবং মাধবরাও নামজোশী।
  • গােপাল কৃষ্ণ গােখলে মহাদেব গােবিন্দ রানাডেকে গুরু বলে স্বীকার করেন।
  • মহাদেব গােবিন্দ রানাডেকে বলা হত পশ্চিম ভারতের সক্রেটিস।

দয়ানন্দ সরস্বতী (১৮২৪-১৮৮৩) :

  • তার আসল নাম মুলা শঙ্কর। তিনি গুজরাটের তঙ্করে জন্মগ্রহণ করেন।
  • ১৫ বছর বয়সে মথুরায় তিনি দীক্ষা নেন। তিনি বেদের উপর জোর দেন এবং তার প্রধান আদর্শ ছিল হিন্দুধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করা।
  • তিনি তিনটি গ্রন্থ লেখেন- হিন্দিতে ‘সত্যার্থ প্রকাশ সংস্কৃতে ‘বেদভাষ্য’ এবং কিছুটা সংস্কৃত ও কিছুটা হিন্দিতে ‘বেদভাষ্য ভূমিকা।
  • বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীকে হিন্দুধর্ম ত্যাগী হিন্দুকে হিন্দুধর্মের অভ্যন্তরে আনতে তিনি শুদ্ধি আন্দোলন চালু করেন।
  • তিনি বলতেন ‘বেদে ফিরে যাও’ (Go to Vedas)।
  • স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর রাজনৈতিক স্লোগান ছিল ভারতবর্ষ ভারতীয়দের জন্য (India for the Indians)।

লালা হরদয়াল

  • সাহারানপুর এবং রুরকি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের বিপ্লবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত লালা হরদয়াল ছিলেন পাঞ্জাবের বিপ্লবী আন্দোলনের প্রাণপুরুষ ।
  • ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে তাঁর নেতৃত্বে পাঞ্জাবে বিপ্লবী কার্যকলাপ ব্যাপক আকার ধারণ করে । সেই সময় তিনি ইংরেজদের বিরুদ্ধে ‘বয়কট’ও ‘প্রত্যক্ষ সংগ্রামের’ ডাক দেন ।
  • ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভারত ছেড়ে বিদেশে চলে যান এবং ১৯১৩ সালে আমেরিকায় প্রবাসী ভারতীয়দের নিয়ে গদর পার্টির প্রতিষ্ঠা করেন ।

ডিরোজিও ও নব্য বঙ্গ বা ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলন

  • হেনরি লুই ডিরোজিও ১৮০৯ খ্রিঃ ১৮ এপ্রিল কলকাতা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন পর্তুগিজ এবং মা ছিলেন বাঙালি।
  • ফরাসি বিপ্লবের মানবিক আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে এবং রুশাে , ভলতেয়ার , হিউম , লক , বেকন , টমপেইন , বেনথাম , রিড প্রমুখ পাশ্চাত্য দার্শনিকের যুক্তিবাদী দর্শনের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে উনিশ শতকের প্রথমার্ধে বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত এক যুব সম্প্রদায় হিন্দু কলেজের অধ্যাপক হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরােজিও – র নেতৃত্বে হিন্দুসমাজে প্রচলিত ধর্মীয় ও সামাজিক কুপ্রথার বিরুদ্ধে তীব্র জেহাদ ঘােষণা করেন , যা নব্যবঙ্গ বা ইয়ংবেঙ্গল আন্দোলন নামে পরিচিত ।
  • দীর্ঘদিন ধরে হিন্দুসমাজে ধর্মকে কেন্দ্র করে যে সমস্ত কুসংস্কার প্রচলিত ছিল সেগুলির বিরুদ্ধে নব্যবঙ্গীয়রা সােচ্চার হয়েছিলেন । তাঁরা জাতিভেদ ও অস্পৃশ্যতা , সতীদাহ প্রথাসহ বেশ কিছু কুপ্রথাকে সমুলে বিনাশ করার আদর্শ গ্রহণ করেছিলেন ।
  • ডিরােজিও তাঁর অনুগামীদের নিয়ে মানিকতলায় শ্রীকৃষ্ণ সিংহের বাগানবাড়িতে গঠন করেন অ্যাকাডেমিক অ্যাসােসিয়েশন নামক এক বিতর্ক সভা ( ১৮২৮ খ্রি. ) । ডিরােজিও নিজে ছিলেন এর সভাপতি এবং ডিরােজিওর ছাত্র উমেশচন্দ্র বসু ছিলেন এর সম্পাদক । এই প্রতিষ্ঠানটি ছিল ভারতের প্রথম ছাত্র সংগঠন । অ্যাকাডেমিক অ্যাসােসিয়েশনের বিভিন্ন অধিবেশনে সনাতন হিন্দুসমাজের জাতিভেদ প্রথা , অস্পৃশ্যতা , পৌত্তলিকতার ওপর আলােচনা ও বিতর্ক চলত ।
  • ডিরোজিওর অনুগামী ছাত্ররা ‘ পার্থেনন ’ নামক একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন ( ১৮৩০ খ্রি. ) ।
  • নব্যবঙ্গীয়দের প্রচেষ্টায় ‘ সােসাইটি ফর অ্যাকুইজিশন অব জেনারেল নলেজ ‘ নামক এক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে ( ১৮৩৮ খ্রি. ) ।

রাণাডে

  • প্রার্থনা সমাজের প্রতিষ্ঠাতা আত্মারাম পান্ডুরঙ্গ হলেও এর অন্যতম প্রাণ পুরুষ ছিলেন বােম্বাই উচ্চ বিচারালয়ের বিচারপতি মহাদেব গােবিন্দ রাণাডে ।
  • রাণাডের উদ্যোগে বিধবা সমিতি ( ১৮৬১ খ্রি. ) ও সারদা সদন সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয় ।
  • পুনা শহরে রাণাডে একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন এবং উচ্চ শিক্ষার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করেন দাক্ষিণাত্য শিক্ষা সমাজ ( Deccan Education Society )( ১৮৮৪ খ্রি. ) ।
  • শিক্ষা সমাজের উদ্যোগে কোনাে প্রকার সরকারি সাহায্য ছাড়াই পুনায় তৈরি হয় ফারগুসন কলেজ ও সাংলিতে উইলিংডন কলেজ এবং অনেকগুলি ছােটোখাটো স্কুল ।
  • ভারতীয়দের স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে রাণাডে ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে পুনায় সার্বজনিক সভা গঠন করেন ।
  • ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পিছনেও তাঁর প্রেরণা কাজ করেছিল ।
  • রাণাডে তাঁর ‘ Religions and Social reforms ‘ গ্রন্থে লিখেছেন — ঐতিহ্য আর বাস্তবকে অস্বীকার করে যুক্তির আশ্রয়ে সংস্কার মূলক কাজ অর্থহীন ।

জ্যোতিবা ফুলে ( ১৮২৭ – ১৮৯০ খ্রি. ):

  • পুণাতে ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। জাতিতে তিনি ছিলেন মালি।
  • ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি সত্যশােধক সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন।
  • তিনি মহারাষ্ট্রে বিধবা বিবাহ আন্দোলন শুরু করেন।
  • ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘গুলাম গিরি’ নামে একটি বই প্রকাশ করেন।
  • তাঁর রচিত অন্যান্য গ্রন্থগুলি হল—সার্বজনিক, সত্যধর্মপুস্তক, ঈশারা এবং শিবাজীর জীবনী।
  • ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে জ্যোতিবা ফুলেকে ‘মহাত্মা’ উপাধি দেওয়া হয়।
  • শিশুহত্যা নিবারণের লক্ষ্যে তিনি গড়ে তােলেন ‘ হােম ফর প্রিভেনশান অব ইনফ্যানটিসাইড ’ , যেখানে সমাজের তথাকথিত অবৈধ ছেলে মেয়েরা ( পিতৃমাতৃ পরিচয়হীন ) আশ্রয় পেত ।
  • তিনি ও তাঁর স্ত্রী সাবিত্রী বাঈ পুনাতে পশ্চিম ভারতের প্রথম বালিকা বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন ( ১৮৫১ খ্রি. ) ।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর :

  • ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
  • ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে বিদ্যাসাগর সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ হন। তিনি অব্রাহ্মণ ছাত্রদের সংস্কৃত কলেজে ভর্তি করেন।
  • বিদ্যাসাগরের প্রচেষ্টায় লর্ড ডালহৌসির সরকার ১৪নং রেগুলেশন দ্বারা বিধবা বিবাহ আইন পাস করায় ( ১৮৫৬ খ্রি. ২৬ জুলাই ) এবং এক ঘােষণায় বলে বিধবা বিবাহজাত সন্তান পিতার সম্পত্তির বৈধ উত্তরাধিকার পাবে ।
  • দরিদ্র বিধবাদের সাহায্য করার জন্য বিদ্যাসাগর ‘ হিন্দু ফ্যামিলি অ্যানুইটি ফান্ড ’ ( ১৮৭২ খ্রি. ) গঠন করেন ও নিজে এর কোষাধ্যক্ষ হন ।
  • বিদ্যাসাগর নারী শিক্ষার উন্নতির জন্য 35টি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
  • ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে বিদ্যাসাগর কোলকাতায় (বেসরকারী) মেট্রোপলিটন ইন্সটিটিউশন’ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তােলেন।
  • ঐতিহাসিক অমলেশ ত্রিপাঠী তাকে ‘ঐতিহ্যশালী আধুনিকতাবাদী’ বলেছেন (Traditional Modernizer)।

স্বামী বিবেকানন্দ (১৮৬৩-১৯০২) :

  • আসল নাম নরেন্দ্র নাথ দত্ত। ডাকনাম ছিল ‘বিলে।
  • তিনি প্রথম জীবনে সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজে যােগ দেন।
  • ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে ক্ষেত্রীর মহারাজা তাকে স্বামী বিবেকানন্দ উপাধি দেন।
  • ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে ১১ সেপ্টেম্বর তিনি বিশ্বধর্ম সম্মেলনে যােগ দেন।
  • ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি দেশে ফেরেন ও রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। রামকৃষ্ণ মিশনের দুটো প্রধান কেন্দ্র ছিল। একটি পশ্চিমবঙ্গের বেলুড় ও অন্যটি আলমােড়ার মায়াবতী। বিবেকানন্দ ছিলেন সভাপতি ও স্বামী ব্রহ্মানন্দ ছিলেন মঠের প্রধান।
  • ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে প্যারিসের ধর্মসভায় তিনি বক্তৃতা করেন।
  • তিনি দুটি পত্রিকা প্রকাশ করেন, ইংরাজিতে মাসিক ‘প্রবুদ্ধভারত’ এবং বাংলায় পাক্ষিক ‘উদ্বোধন’।
  • তার লিখিত গ্রন্থগুলি হল পরিব্রাজক, বর্তমান ভারত, জ্ঞানযােগ, ভক্তিযােগ, রাজযােগ ইত্যাদি।
  • তাকে বলা হয় ভারতের প্রথম সমাজতন্ত্রী।
  • তিনি যুবসমাজের উদ্দেশ্যে বলেন “ গীতা পাঠ অপেক্ষা ফুটবল খেলা ভালাে । ”
  • স্বামীজিকে স্মরণ করে আজও প্রতি বছর ১২ জানুয়ারি স্বামীজির জন্মদিনটি যুব দিবস রূপে পালিত হয় ।